রুবেল আহমেদ, মৌলভীবাজার:: ছবিগুলো প্রায় তিন বছর আগের তোলা। তার পুরো নাম নাঈম আহমেদ তালুকদার। নাঈম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলাধীন টেংরাবাজার ডেফেলুরা, এবং পতনঊষার, (অনন্তপুর গ্রামে)। বর্তমান ঠিকানা চাঁদনীঘাট, মৌলভীবাজার। নাঈম ছোট বেলা থেকেই উদার মনের অধিকারী ছিলেন। অন্যের সুখে তিনি হাসতেন আবার অন্যের দুঃখে তিনি কাঁদতেন। তিনি বরাবরই ছিলেন ঠান্ডা মেজাজের ছেলে। তার পরিবারের ছিলো মা আর ছোট দুটি বোন। ২০১৩ সালে নাঈম মৌলভীবাজার পৌরসভা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থকে এসএসসি পাশ করেন। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর সাথে যোগ দিয়ে গরীব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন । তথ্যসূর্থে জানা যায় তিনি অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় সরকারি প্রজেক্ট কিশোর কিশোরী ক্লাবের সাথে জড়িত থেকে জাতীয় পর্যায়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সরকারি ভাবে পুরুষ্কার পেয়েছেন। নাঈম এর পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে সামাজিক কাজকর্ম। একসময়ে চাকরির তাগিদে ছারতে হয় মৌলভীবাজার।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে নাঈম যোগদান করেন ঢাকায় বিপ্রপার্টি ডটকম কোম্পানিতে, কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট চাকরি করতেন। মৌলভীবাজার ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে চাকরিতে মনবসতে চাচ্ছিলনা তার, অসহায় মানুষগুলোর প্রতি মনটা বড্ড কাঁদতো। তাই চাকরি করে মাস শেষে যে টাকা বেতন পেতেন ও কাজের উপরে কিছু অতিরিক্ত টাকা রোজগার করতেন সেই টাকা থেকে প্রতি মাসে এক হাজার থেকে পনেরোশ টাকার মধ্যে কিছু খাবার কিনতেন তিনি।
যখনই কারো রক্তের প্রয়োজন পড়ে তখনই ছুটে যান। অনেক মুমূর্ষু রোগীর জন্য তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে দেন বলে জানা যায়।
খাবারের প্রতিটি প্যাকেটের মধ্যে থাকতো ১০ থেকে ১৫ টি প্যাকেট তেহারি বা,বিরিয়ানি। আর ১৫ টি কোকাকলা/পেপসি , ১০ থেকে ১৫ টি আপেল কিনে এগুলা প্যাক করে তিনি নিজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে,শহরের আনাচকানাচে ফুটপাতে দিনাতিপাত করা কিছু সংখ্যক অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মা ও রিকশা চালক ভাইদেরকে খাবারগুলো বিলিয়ে দিতেন নিরবে।
নাঈম এগুলা কখনো তুলে ধরেন নি। তার মনে হতো মানুষ বিষয়টি কিভাবে নিবে। একতা একদিন একজন ভাই নাঈমকে খাবারের প্যাকেট কিছু বৃদ্ধ বাবা-মাকে বিলিয়ে দিতে দেখে বলছিলেন তুমি খাবার বিলিয়ে দেওয়ার সময় কিছু ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড দাও। তাহলে অনেক মানুষ আগ্রহ পাবে ও অসহায়দের পাশে এগিয়ে আসবে। সেই কথা শুনে তিনি ২ টি ছবি আপলোড করে ছিলেন,আবার কিছু দিন পরে ডিলেট ও করে দেন তিনি। কিন্তুু এখন,উনার ধারনা বদলে গিয়েছে। তাই তিনি উনার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট এর মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি তার পোস্টে বলেন আমি লোক দেখানোর জন্য আজ ৩ বছর পর বিষয়টি তুলে ধরি নি!
এ বিষয়ে নাঈম আহমেদ তালুকদার এর কাছে সরাসরি জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি খুব সাধারন একটি পরিবারের সন্তান। আমার এতো টাকা-পয়সা ও নেই। আমি সবসময় ভাবতাম, ভালো এক জুড়া জুতা না কিনে, ভালো কিছু না খেয়ে ও অনেক জায়গায় ঘুরাঘুরি না করে, এই হাজার-পনেরোশ টাকা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ জনকে অন্তত এক বেলা একটু ভালো খাবার খাওয়াতে পারবো।
তিনি আরো বলেন আজ তিন বছর পর আমি কাউকে শো অফ করার জন্য আমার ফেইসবুক আইডিতে এই পোষ্টটি, তুলে ধরিনি । এ রকম মহৎ কাজে নাঈমের মতো যেনো সকলেই এগিয়ে আসে।
সিলেটপ্রেসবিডিডটকম/ ২৪ মার্চ ২০২১/ শাহরিয়ার খাঁন সাকিব