সিলেটপ্রেস ডেস্ক :: সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিক-সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পরিবহণ শ্রমিকদের উসকে দেন আলী আকবর রাজন। তার সাথে যোগ দেন আরেক শ্রমিক নেতা আবুল।
আলী আকবর রাজন সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি জেলা ছাত্রদলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই রাজন চৌহাট্টা এলাকায় শ্রমিকদের নিয়ে অবস্থান নেন। বাঁধা দেন সড়কের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদেরও। পরে খবর পেয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলোচনা শুরু করেন। আলোচনা চলাকালীন রাজন সিসিকের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ধাক্কা দেন। ধরেন কলার চেপেও। এতে উত্তেজনা শুরু হলে পিছনে থাকা পরিবহণ শ্রমিকরা দুনিয়ার মজদুর এক হও স্লোগানে হামলা চালান।
জানা যায়, আলী আকবর রাজন মদন মোহন কলেজ থেকেই ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় বর্তমানে রাজনীতিতে কিছুটা নিক্রিয় তিনি। তবে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও বর্তমানে পরিবহণ শ্রমিকদের প্রতিনিধি হয়ে মাঠে সক্রিয় আলোচিত-সমালোচিত এ নেতা। নগরের চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ডকে ঠিকিয়ে রাখতে তিনিই বারবার উচ্ছেদ অভিযান পণ্ড করে দিয়েছেন। এজন্য বারবার পরিবহণ শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন তিনি। সবশেষ বুধবারেও তিনি উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদকালে পরিবহন শ্রমিক ও সিটি কর্পোরেশন কর্মিদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, সিলেট সার্কিট হাউজ-বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন থেকে চৌহাট্টা এলাকা থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে পরিবহন শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়। এতে কর্ণপাত না করে উল্টো তাদেরকে স্ট্যান্ডের জায়গা দিতে প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানায় পরিবহন নেতারা।
সকালে সিটির শ্রমিকরা রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে আসলে পরিবহন শ্রমিক নেতারা এতে বাধা দেন। সেই সাথে অবরোধ করে রাখে চৌহাট্টা আম্বরখানা সড়ক। পরে পুলিশ ও সিটি মেয়র এসেও পরিবহন শ্রমিকদেরকে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা সাড়া দেয়নি।
এ অবস্থায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মেয়রের দিকে তেড়ে আসলে সংঘর্ষ বাধে। বেশ কিছু সময় ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর পিছু হটে পরিবহন শ্রমিকরা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা বিকেল আড়াইটার দিকে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে বাস-মাইক্রোবাস রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে সিলেটের চণ্ডিপুল, হুমায়ূন রশীদ চত্বর, ইসলামপুর, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ করে রাখেন। এতে শহর থেকে বাইরে যাওয়ার কিংবা শহরে প্রবেশের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়।
পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবহণ মালিক শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে নানা আলোচনা শেষে বিকেল ৪ টায় অবরোধ তুলে নেয়ার কথা জানান।
এদিকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিক-সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সময় গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে আগামী সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে সিলেটে সকল ধরণের পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহণ শ্রমিকরা।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত।
তিনি বলেন, আমরা দুয়েকদিনের মধ্যে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেবো। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে পরিবহণ ধর্মঘট পালন করবো। সিলেটের সকল ধরণের পরিবহণের মালিক-শ্রমিকরা মিলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিলেটপ্রেসবিডিডটকম /১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১/ এফ কে