স্টাফ রিপাের্টার :: সিলেটের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক ভুক্তভােগী। ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগম (৪৫) ও ডাঃ সাহাব উদ্দিন (৩৫) নামের দুই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায়’ দুই সন্তানের জননীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে স্বামী আজির উদ্দিন এই মামলা দায়ের
করেন। তিনি দক্ষিণ সুরমার সিলাম তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
অন্যদিকে,ওই দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আরাে একটি মামলা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমারগােপশহরের আলমগীর আহমদ অপর মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দুটি পিবিআই (পুলিশ ব্যুরাে অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করছে।
আগামী ১৭ফেব্রুয়ারী এই মামলা দুটির পরবর্তী শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। নিহতের স্বামী আজির উদ্দিন জানান, তার দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে। একজনের বয়স ১৩ ও অপরজনের ৮ বছর। তৃতীয় সন্তান নেয়ার প্রথম থেকেই স্ত্রী সুলতানা বেগমকে (২৮) গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগমের তত্বাবধানে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের বয়স হয়েছিল ৬ মাস। এই অবস্থায় আজির উদ্দিন স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে নিয়মিত যােগাযােগ রাখছিলেন ডাক্তার তৈয়বার সাথে। এক মাস আগে ডা.তৈয়বা তার সত্রীকে চিকিৎসার জন্য সিলেট মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান।
সেখানে ৩ দিন থেকে ১২ হাজার টাকা বিল পরিশােধ করেন তিনি পরবর্তীতে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ডা. তৈয়বার সাথে যােগাযােগ করেন। তখন তিনি মাদার কেয়ার হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। ভর্তি হওয়ার পরে ডাক্তার তৈয়বা বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বলেন, গর্ভের বাচ্চা সুস্থ আছে। কোনাে সমস্যা হবে না বলে
তিনি ইনজেকশন ও ওষুধ প্রদান করে সেবিকা (নার্স)-এর কাছে রােগী রেখে বাসায় চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর রােগীর শারীরিক অবস্থার আরাে অবনতি হয়।
তখন রােগীর স্বামী ও অবুঝ দুই শিশু কান্নাকাটি করে নার্স ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ডাক্তার আনার জন্য বলার অনেকক্ষণ পর দায়িত্বরত নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. তৈয়বাকে ফোন করেন। ডা. তৈয়বা আসেন তারও ঘণ্টাখানেক পরে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আজির উদ্দিন আরাে জানান, বাচ্চা ভেতরে নষ্ট হয়ে গেছে এবং রােগীর প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। তাই প্রুত ১২ থেকে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। তাংক্কণিক রােগীর স্বামীসহ স্বজনরা ৫ ব্যাগ রক্ত
প্রদান করেন। এর কিছুক্ষণ পর ভা, তৈয়বা বলেন, রােগীকে বার্চাতে হলে ডিএনসি করতে হবে। আর তাতে প্রচুর, টাকা লাগবে। রাত ৩ টার দিকে ডাক্তার তৈয়বা বলেন, রােগীর অবস্থা ভালাে না। তার বাঁচার সম্ভাবনা ৪০ ভাগ।
তাড়াতাড়ি অন্য আইসিইউতে নিতে হবে। তখন ডাক্তার তৈয়বা রক্তমাখা কাপড়ে রােগীকে নিয়ে নগরীর পার্ক ভিউ হাসপাতালে যান।
আজির উদ্দিন আরাে জানান, পার্ক ভিউ হাসপাতালে যখন রােগীকে প্রেরণ করা হয়। তখন ডা, তৈয়বা চিকিৎসার কোনাে কাগজ প্রদান করেননি। তিনি শুধু মাদার কেয়ার হাসপাতালের প্যাডে কী লিখে দিয়েছিলেন। ফলে পার্কভিউ
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বার বার চিকিৎসার ফাইল খুঁজলে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। পার্কভিউ হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়। তাছাড়া তার স্ত্রী মৃত্যুর পর বার বার চিকিৎসার কাগজপত্র চাইলেও ডা. তৈয়বা বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা প্রদান করেননি।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় মূত্যুবরণকারী সুলতানা বেগমের স্বামী আজির উদ্দিন বাদী হয়ে সিলেট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, একটি মামলা দায়ের করেন। কতােয়ালী থানার সিআর মামলা নং ১২/২০২১।
অপরদিকে, চলতি মাসের ২ তারিখে আদালতে ডা. সৈয়দা তৈয়বা বেগম (৪৫) ও ডাঃ সাহাব উদ্দিন (৩৫) এর বিরুদ্ধে আরাে একটি মামলা দায়ের করে দক্ষিণ সুরমার গােপশহরের আলমগীর আহমদ। তিনি অভিযােগ করেন ডা,
সৈয়দা তৈয়বা বেগম ও ডাঃ সাহাব উদ্দিন এর অবহেলায় তার নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয় অপারেশনের সময় তার গলা কেটে ফেলা হয়। তাদের কাছে যখন শিশুটিকে তুলে দেয়া হয়, তখন তার গলায় কস্টিব লাগানাে ছিলাে। এই ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করেন আলমগীর আহমদ।
কতােয়ালী থানার সিআর মামলা নং ০৫/২০২১। সুলতানা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার আইনজীবী ফারুক আহমদ জানান,মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী
মামলার পরবর্তী শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
এ ব্যাপারে ডাঃ তৈয়বা ও ডাঃ সাহাব উদ্দিনের সাথে যােগাযােগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিলেটপ্রেসবিডিডটকম /১১ জানুয়ারি ২০২১/ এফ কে