আতিয়া ফাইরুজ ঐশী :: বর্তমান বিশ্ব করোনা মহামারির ফলে অনেকটা থমকে রয়েছে। পৃথিবী জুড়ে অনেক কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করলেও অতীতের তুলনায় তা এখনো অস্বাভাবিকই বটে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশেও লম্বা সময় নিয়ে চলছে কোভিড-১৯-এর তাণ্ডব ফলে নিন্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বদ্ধ রাখার পরে বাধ্য হয়ে পুনরায় সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা হলেও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ভেবে এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
অনলাইন ক্লাস, নানা ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির দ্বারা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সঙ্গে সংযুক্ত রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই ইতিমধ্যে পড়ালেখার সঙ্গে যোগাযোগ তুলনামূলক কম। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে নানান ধরনের গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের অধিক জড়িত রাখছেন, যা জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক কিন্তু তরুণদের একটি বিশাল অংশ ধাবিত হচ্ছে অনলাইন গেমসের দিকে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর পর্যন্ত অধিকাংশ ছেলেরা ভয়ানকভাবে আসক্ত হচ্ছে অনলাইন গেমগুলোর প্রতি, যা তাদের বিরত রাখছে নানান ধরনের গঠনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে। অবসর সময়গুলো তারা অন্যান্য কাজের চাইতে অনলাইন গেমস খেলে অতিবাহিত করতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় পরিবারের লোকজনকে। বর্তমানে ফ্রি-ফায়ার, পাবজি ও ইত্যাদি নামক অনলাইন গেমগুলো বিপুল পরিমাণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফলে তরুণরা সময়কে মূল্যহীনভাবে গেমসের পেছনে ব্যয় করছে, যার প্রভাব পড়ছে তাদের শারীরিক সুস্থতার ওপরও।
লম্বা সময় পর্যন্ত মোবাইল বা কম্পিউটার চালানো চোখ ও মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, যা তারা হয়তো এখন বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু পরবর্তীকালে কোনো এক সময় হয়তো তাদের এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। তাছাড়া এই গেমগুলোতে মানুষের মৌলিক বিকাশগত কোনো শিক্ষণীয় বিষয় নেই, যা আছে তা শুধু মারামারি, বন্দুকযুদ্ধ ইত্যাদি সব শিক্ষা যা কিশোরদের হয়তো অপরাধপ্রবণও করে তোলার জন্য দায়ী থাকতে পারে। শিশুরা দেখে শিখে, তাহলে যে শিশুটি সারা ক্ষণ গেমসের মাধ্যমে মারামারি, বন্ধুক চালানো, যুদ্ধ-দাঙ্গা ইত্যাদি দেখে বড় হচ্ছে, সে ভবিষ্যতে তাহলে কি শিখবে? তা আন্দাজ করাই যায় মানবতার শিক্ষার ছিটেফোঁটা তার মধ্যে থেকে থাকলেও তা বিসর্জন দিতে হয়তো তার সময় লাগবে না। তাছাড়া বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা অনলাইনে এই গেমস খেলতে গিয়ে পরিবারের কোনো কাজে সহায়তা করে না বরং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার গুণটা তাদের অজান্তেই খুব ভালোভাবে অর্জন করে ফেলে। লম্বা সময় নিয়ে এই গেমস খেলার সময় কারো কোনো হুকুম তাদের জন্য অসহনীয়। শান্তিপূর্ণভাবে গেমস খেলার জন্য তাদের চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশযেখানে থাকবে না কারো বাধা, ব্যক্তিগত মোবাইল-কম্পিউটার। তাছাড়া গেমসে বন্দুক চালিয়ে মানুষ হত্যা করতে করতে বাস্তব জীবনেও সেটা করার প্রশিক্ষণ অনেকের হয়তো হয়েই যায়। আর বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের জন্য সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার নয়।
তাই ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সুরক্ষার কথা ভেবে এসব অনলাইন গেম বন্ধ করা নিতান্তই জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া প্রতিটি পরিবারকেও সচেতন হতে হবে। সন্তানদের এরূপ গেমস খেলার ব্যাপারে বুঝের সঙ্গে শাসন করতে হবে। অনেকে হয়তো ভাবছেন, পড়ালেখার চাপ কম, বাইরে গিয়ে খেলা করাও করোনার কারণে নিরাপদ নয়, তাই বাসায় বসে অন্তত গেমস খেলেই না হয় সময় কাটাক। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে থেকেই অনলাইন গেমস খেলায় আসক্ত, তারা তো আছেই, পাশাপাশি যেসব বাচ্চা নতুন করে এসব অনলাইন গেমস খেলায় আসক্ত হয়ে গেছে এবং ইতিমধ্যে পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে আপনাদের সে বাচ্চাকে এসব গেম থেকে বিরত রাখা ও পড়ালেখায় পুনরায় মনোযোগী করে তোলা কি খুব সহজ হবে? সময় কাটানোর বাহানায় অনেক শিক্ষণীয় কর্মকাণ্ড করা যায়, তাই নিজ সন্তানদেরকে জ্ঞানের ইতিবাচক বিকাশমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে ধাবিত করার দ্বারা তাদের জ্ঞানের প্রসার করার চেষ্টায় থাকতে হবে। সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
সিলেটপ্রেসবিডিডটকম /০২ জানুয়ারি ২০২১/ এফ কে