সিলেটপ্রেস ডেস্ক :: খোলা আকাশের নিচে পাতা চৌকিতে খুটি বেঁধে সেই খুটিতে পলিথিন ও ছেড়া কাপড় মুড়িয়ে তৈরি ঘর। সেই ঘরে সংসার পেতেছিলেন আল্পনা বেগম (৩৫)। ঘরটি ছিলো আবার অন্যের জমিতে গরুর গোয়াল এবং টয়লেটের পাশে।
সেই একটিমাত্র চৌকিকে গাদাগাদি করে বসবাস করছিলেন আল্পনা, তার সাত বছরের মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে, তিন বছরের ছেলে ও অসুস্থ স্বামী সেকেন্দার আলী (৫০)।
নদী ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারটি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাছিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমানের গোয়াল ঘর ও টয়লেটের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় এভাবেই বসবাস করছিলেন ৭ মাস ধরে।
অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আল্পনার ২০ বছর আগে কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় হাছিপাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর সঙ্গে। দিনমজুরি ও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন সেকেন্দার আলী। এক সময় তারা পাড়ি জমান রংপুর শহরে। বস্তিতে সংসার পাতেন। সেখানে স্বামীকে সহায়তা করতে অন্যের বাসায় ঝির কাজ করতেন আল্পনা। দুজনের আয়ে সুখে-দুঃখে চলছিল সংসার। তাদের সংসারে একে একে আসে দুই সন্তান। এ বছরের শুরুর দিকে মহামারি করোনা তাদের সেই সুখের সংসার তছনছ করে দেয়। কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। ফিরে আসে এলাকায়। এরপর থেকে আল্পনার চাচা আজিজার রহমানের জায়গায় পলিথিনের ঘরে তাদের বসবাস।
করোনার প্রভাব দীর্ঘ হয়। কাজ নেই স্বামী সেকেন্দার আলীর। এক সময় অসুখে পড়েন তিনি। টাকার অভাবে ঔষধ-পথ্য না পেয়ে অসুখ পুরোপুরি সারেনি। এখন দুর্বল শরীরে কাজে যেতে পারেন না। আল্পনার সামান্য আয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয় তাদের।
তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন গণমাম্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর উলিপুর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল্পনার ফুফুর জায়গায় তাদের জন্য টিনের চালাঘর করে দিয়েছে। তবে সংগঠনটির স্বল্প সামর্থ্যে ঘরের দরজা-জানালা করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে তীব্র শীতের মধ্যে ঠান্ডা বাতাসে কষ্ট পেতে হচ্ছে তাদের।
আল্পনার বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘স্বামীর বয়স হওয়ায় তিনি আগের মতো পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না। তাছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে বসে আছেন। এদিকে ঘরে খাবার নেই। ছেলে-মেয়েকে পেটপুরে খেতে দিতেও পারি না।’
সেকেন্দার আলীর বলেন, ‘কাজ নেই। তাই রোজগারও নেই। আগে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা করতাম। অর্থের অভাবে সেটাও বন্ধ। ব্যবসাটা চালু করতে পারলে চলতে পারতাম।’
বল্লভেরখাষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, পরিবারটি অসহায়। তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের গৃহনির্মাণ চলমান রয়েছে। আল্পনা বেগমকে সেই প্রকল্পে জমিসহ ঘর করে দেওয়া হবে।
সিলেটপ্রেসবিডিডটকম /৩০ ডিসেম্বর ২০২০/ এফ কে